বন্যা ও মানবতা

         "বন্যার জলে ভেসে যায় প্রাণী/মুছে যায়                                        মানবতার গ্লানি,
        শস্য শ্যামল বাংলায়/জেগে ওঠে হাহাকার ধ্বনি"
       অন্ন নেই খাদ্য নেই,/ শোনা যায় শুধু অবুঝ শিশুর
                           ক্রন্দনধ্বনি।"




মানবদেহের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে অসংখ্য নদী-নালা,খাল,বিল,হাওড়,বাওড়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাছাড়া হিমালয় পর্বতের বরফ গলা পানির প্রভাবে এ দেশের নদ-নদীগুলো প্রয় সব সময়ই পূর্ণ থাকে।একদিকে বরফ গলা পানি। নদীগুলো ভরে উঠতে থাকে,অপরদিকে বারিপাতের ফলেপানিতে নদীর দু'কুল ছাপিয়ে তৃনভূমি প্লাবিত হয়। তার ফলে দেখা দেয় বন্যা। এটা বাংলাদেশের জন্যে মারাত্বক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহা-অভিশাপ। প্রতি বছর বন্যায় দেশের আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার ফসল বিনিষ্ট হয় ( আনুমানিক)। বর্তমান সময়ের বন্যা সত্যই অনেক ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে।  অনেক মানুষ পানিবন্দি, কোন খাবার নাই,মাথা গুজার মতে কোন স্থান নাই।আসুন আমরা নিজেদের সাধ্যেমতো বর্নার্থোদের সাহায্যে এগিয়ে আসি।আমি, আপনি অনেক ভালো আছি কিন্তু বন্যা কবলিত মানুষদের কথা একটু চিন্তা করে দেখুন তাদের কি অবস্থা।
অনেক মহোল সরকারকে বিভিন্ন ভাবে দোষারোপ করা শুরু করেছে আরে ভাই এইটুকু সাধারন বুদ্ধি নাই যে সরকারের একার পক্ষে সমস্যা শতভাগ হ্রাস করা সম্ভব না।সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের ব্যাক্তি পর্যায়ে সবাই কে এগিয়ে আসতে হবে।



এক হিসাবানুযায়ী দেখা গেছে প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর  প্রলয়ংকরী বন্যা দেখা দেয়। গত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ সালে এদেশে প্রলয়ংকরী বন্যা হয়ে গেছে। স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যা ছিল ২০০৪ সালের বন্যা। ঐতিহাসিক তথ্যানুযায় পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এদেশে গত ১০৪ বছরে ১৯১০, ৩১, ৫৪, ৫৬, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯৮, ২০০০, ২০০৪, ২০০৭ ও বর্তমান ২০১৭ সহ ১৯ বার বন্যা হয়েছে। গড়ে প্রায় ছয় বছর অন্তর অন্তর একবার বন্যা হয়েছে। তাছাড়া ছোট খাট বন্যা প্রতি বছরই হচ্ছে। এভাবে যদি বন্যা হয় তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে উন্নত হবে?
এ বছর হঠাৎ করেই যেন বন্যার আলামত দেখা দিয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে বন্যার প্রকোপ সবচাইতে বেশি দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলোতে। জেলাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্দা, মুন্সিগঞ্জ প্রভৃতি। প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী যদি এভাবে বাংলাদেশে বন্যা হতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে? তাকে কি নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় নেই?
প্রকৃতির সাথে আমরা হয়তো পেরে উঠবো না কিন্তু কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 বন্যার প্রতিকার: বন্যার প্রতিকার কিভাবে করা যাবে তা নিয়ে হয়তো আমরা অনেকে চিন্তা করি না। আমরা বন্যা সমস্যার প্রতিকার গুলো জেনে নিই।
(১)    বন্যা সর্ম্পকে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২)    ত্রাণ সামগ্রী মজবুত রাখতে হবে।
(৩)    প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বহুতল আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।
(৪)    উজান এলাকায় জলাধার নির্মাণ করে বর্ষাকালে নদীর উদ্বৃত্ত পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(৫)    নদীর উপচানো পানি প্রতিরোধে সারাদেশে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
(৬)    বর্তমানে যেসব বেড়িবাধ আছে সেগুলো উচু করতে হবে।
(৭)    পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিস্তুৃত করে দিতে হবে।
(৮)    রাস্তাঘাটের মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ কালভার্টসহ পানি সরবরাহ পথের সৃষ্টি করতে হবে।
(৯)    ভরাট নদী-নালা সংস্কারের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(১০)    বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
(১১)    আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে বৃহৎ নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
(১২)    নদীর পাড়সহ সারাদেশে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
(১৩)    পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
(১৪)    বন্যাদুর্গতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে যাতে তারা দুর্যোগের সময় এখানে আশ্রয় নিতে পারে।
(১৫)    খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘী ও হাওর-বাঁওড় খনন/পুনঃখনন বা সংষ্কার করে জলাশয়ের গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।



‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্যএকটু           সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা?’

Comments

Popular posts from this blog

Request for Meeting to Discuss PhD Opportunities

How to earn money from blog post ?